Job

বাঙালা জাতির উদ্ভব

- বাংলা - বাংলা সাহিত্য | NCTB BOOK
3.3k
Summary

ঐতিহাসিকদের মতে, বাংলার পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে প্রাচীন এবং নতুন প্রস্তরযুগ ও তাম্রযুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে। এই সকল সময়ে, বাংলার পার্বত্য সীমান্ত অঞ্চলে মানুষ বসবাস করত এবং পরে তারা অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমান বাঙালি জনগোষ্ঠী বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে গঠিত, যার মূল কাঠামো প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মুসলমান অধিকারের পূর্ব অভ্যন্তরীণ।

সাম্প্রতিক গবেষণায়, বাঙালি জনগোষ্ঠীকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে:

  • প্রাক-আর্য বা অনার্য নরগোষ্ঠী
  • আর্য নরগোষ্ঠী

আর্যদের আগমনের আগে বাংলায় অনার্যদের বসতি ছিল, যারা বাঙালি জীবনযাত্রার ভিত্তি গঠন করে। বৈদিক যুগে বাঙালিরা আর্যদের দ্বারা অসভ্য বলে বিবেচিত হয়। বাংলার আদিম অধিবাসী আর্যজাতি থেকে উদ্ভূত হয়নি; বরং তারা নেগ্রিটো, অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ও ভোটচীনীয় শাখায় বিভক্ত। গবেষকরা জানান, অস্ট্রিক গোষ্ঠী থেকে বাঙালি জাতির প্রধান অংশ গঠিত হয়েছে, যারা প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে ইন্দোচীন থেকে বাংলায় প্রবেশ করে।

প্রায় একই সময়ে দ্রাবিড় জাতি এদেশে আসে এবং সভ্যতায় তাদের উন্নতি ঘটে। অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় জাতির সংমিশ্রণে আর্যপূর্ব বাঙালি জনগোষ্ঠী সৃষ্টি হয়, যার রক্তধারা বর্তমান বাঙালি জাতির মধ্যে বিদ্যমান।

বাংলার পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে প্রাচীন ও নব্য প্রস্তরযুগ এবং তাম্রযুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে বলে ঐতিহাসিকেরা উল্লেখ করেছেন। এ সকল যুগে বাংলার পার্বত্য সীমান্ত অঞ্চলেই মানুষ বাস করত এবং ক্রমে তারা অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমান বাঙালি জনগোষ্ঠী বহুকাল ধরে নানা জাতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। এর মূল কাঠামো সৃষ্টির কাল প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মুসলমান অধিকারের পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। সমগ্র বাঙালি জনগোষ্ঠীকে দু ভাগে ভাগ করা যায় : ক. প্রাক-আর্য বা অনার্য নরগোষ্ঠী এবং খ. আর্য নরগোষ্ঠী। এদেশে আর্যদের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত অনার্যদেরই বসতি ছিল । এই প্রাক-আর্য নরগোষ্ঠী বাঙালি জীবনের মেরুদণ্ড। আর্যদের আগমনে সে জীবন উৎকর্ষমণ্ডিত হয়ে ওঠে।

বৈদিক যুগে আর্যদের সঙ্গে বাংলাদেশবাসীর কোন সম্পর্ক ছিল না। বৈদিক গ্রন্থাদিতে বাংলার নরনারীকে অনার্য ও অসভ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলার আদিম অধিবাসী আর্যজাতি থেকে উদ্ভূত হয় নি। আর্যপূর্ব জনগোষ্ঠী মূলত নেগ্রিটো, অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ও ভোটচীনীয়—এই চার শাখায় বিভক্ত ছিল ।

নিগ্রোদের মত দেহগঠনযুক্ত এক আদিম জাতির এ দেশে বসবাসের কথা অনুমান করা হয়। কালের পরিবর্তনে তাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব এখন বিলুপ্ত। অস্ট্রো-এশিয়াটিক বা অস্ট্রিক গোষ্ঠী থেকে বাঙালি জাতির প্রধান অংশ গড়ে উঠেছে বলে গবেষকগণের ধারণা। কেউ কেউ তাদের 'নিষাদ জাতি' বলেন। প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার বছর পূর্বে ইন্দোচীন থেকে আসাম হয়ে বাংলায় প্রবেশ করে অস্ট্রিক জাতি নেগ্রিটোদের উৎখাত করে । এরাই কোল ভীল সাঁওতাল মুণ্ডা প্রভৃতি উপজাতির পূর্বপুরুষ হিসেবে চিহ্নিত। বাঙালির রক্তে এদের প্রভাব আছে। বাংলা ভাষার শব্দে ও বাঙালি জীবনের সংস্কৃতিতে এরা প্রভাব বিস্তার করেছে। অস্ট্রিক জাতির সমকালে বা কিছু পরে প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে দ্রাবিড় জাতি এদেশে আসে এবং সভ্যতায় উন্নততর বলে তারা অস্ট্রিক জাতিকে গ্রাস করে। অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় জাতির সংমিশ্রণেই সৃষ্টি হয়েছে আর্যপূর্ব বাঙালি জনগোষ্ঠী। এদের রক্তধারা বর্তমান বাঙালি জাতির মধ্যে প্রবহমান।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...